রাজমাতা গায়ত্রী দেবী RAJMATA GAYATRI DEBI {Written in Modern Kamtapuri (Rajbanshi)} Language
রাজমাতা
গায়ত্রী দেবী
RAJMATA GAYATRI DEBI
(আধুনিক
কামতাপুরী-রাজবংশী ভাষাত লেখা, লেখক দ্বারা রচনাধীন ‘ভোরের তারা’ সংকলন থাকিয়া
গৃহীত)
{Excerpt from forthcoming book 'Bhorer Tara' being written in modern Kamtapuri (Rajbanshi) language by me}
ভোর
বেহানের লালিমা ভরা আকাশ
শিল-শিলানি মৃদু মনমাতানো হাওয়া
সেইদিন দেওঞা হইচিল আলোকিত
উদিত হইচিল উজ্বল ভোরের
তারা
স্বর্গ থাকিয়া নামিয়া আসা এক
পরী
সগারের নয়নমনী প্রানবন্ত
সুহাসিনী |
আসিলো
আর মন ছুইঁয়া চলি গেলো
দুই
চোখুর পলক পড়িতে না পড়িতে
উল্কার
বেগত আসিয়ায় চলি গেলো
মনের
কাথা মনতে থাকি গেইল
কত
দিনে পুরিবে হামার মনের আশা ?
আবার
ফিরিয়া আসিস হামার প্রিয়্মনি |
আজি লোকে এমনিতে রাজবংশী বলিয়া
পরিচয় দিতে লইজ্জা পায়,
কিন্তুক যদি গায়ত্রী দেবীর কাথা কওহা যায়, তাহলে
যে কোন রাজবংশী একেবারে এক কাথায় কয়হা উঠে – হ্যা, হ্যা, মুই-ও ত’ গায়ত্রী দেবীর
দেশের লোক, কোচবিহারের লগতে মোর বাড়ি | নাম শুনিচেন ত’ কোচবিহার একটা বিশাল রাইজ্য আর গায়ত্রী
দেবী ঐঠেকার রাজকুমারী ছিল | পরে, ব্যাহা
হবার পিছত হয়া যায় জয়পুর রাইজ্যের মহারানী, জয়পুরের রাজমাতা |
দেখিতে অতি সুন্দরী ছিল সেই
রাজকুমারী |
আর, দেখিতে সুন্দরী ক্যানে হবে নি ? কোচবিহার রাজ পরিবারত দেশ-বিদেশের রাজ-পরিবারের ব্যাহা-সাদীর সম্পর্ক হইত |
এইজৈন্য, সাধারণ রাজবংশীর চাইতে গায়ত্রী দেবী
অনেকগুনে বেশী সুন্দরী ছিল | এত সুন্দর ছিল যে লোকে কহে সারা
পৃথিবীর মইধ্যে সব চাইতে বেশী সুন্দরী নারীর মিঝত একজন চিরকালের সেরা সন্দরী হইল
গায়ত্রী দেবী | অমার মাও ছিল এক সুন্দরী রাজকুমারী – বরোদা রাইজ্যের মারাঠী রাজা সভাজী রাও গাইকোওয়াড়-III-র গন্যমান্য সমাজসেবী বেটি রাজকুমারী ইন্দিরা রাজে | গায়ত্রীর জন্ম হয় সন ২৩শে মে ১৯১৯ ইংল্যান্ডত | বাপের
নাম ছিল কোচ বিহার রাইজ্যের যুবরাজের ছোট ভাই রাজকুমার জিতেন্দ্র নারায়ন ভূপ
বাহাদুর | জ্যালা ওয় খুব ছোট ছিল, স্যালায়
অর জ্যাঠার মারা যাওআর পর অর বাপ কোচবিহারের রাজসিংহাসনত বসে |
গায়ত্রী দেবী ছুটুবেলাত প্রথমে
লন্ডনত গ্লেন্ডাওয়ার প্রিপ্রেটরী স্কুলত
পড়াশুনা করিচিল |
পরবর্তী কালত, শান্তি নিকেতনত বিশ্বভারতী
ইউনিভার্সিটিত পড়াশুনা করিচিল | তার পরে, সুইজারল্যান্ডের লাউসেনত পড়াশুনা করিবা গেইছিল আর সঙ্গে গেইছিল অর মাও আর
ভাই | তারপর, লন্ডন স্কুল অফ
সেক্রেটারিস’ত সেক্রেটারিয়াল স্কিল্স অধ্যয়ন করে | লন্ডন’ত ব্রিলিয়ান্টমন্ট আর মংকী ক্লাব’ত ওয়
লেখাপড়া করিচিল |
রাজস্থানের
জয়পুর রাইজ্যের “হি’স হাইনেস সরামদ-ই-রাজা-ই-হিন্দুস্তান রাজ
রাজেন্দ্র-শ্রী মহারাজাধীরাজ স্যার” সাওয়াই মান সিং-II
এর সঙ্গে রাজকুমারী গায়ত্রী
দেবীর ব্যাহা হয় ১৯৪০ সনের ৯ই মে | অমার দুইজনের প্রথম দেখা হয় জ্যালা গায়ত্রী
দেবী ১২ বছরের ছিল | সেই সময় কোলকাতাত সাওয়াই মান সিংহ(জয়)
পোলো খেলেবা আসিছিল আর গায়ত্রী দেবীর পরিবারের সঙ্গে অমার বাড়িত কয়েকদিন রহিচিল |
সেই থাকিয়া অমার পরিচয় তৃতীয় মহারানী, জয়পুরের
রাজমাতা (১৯৪০-১৯৭০) বলিয়া বেশী খ্যাতিলাভ করে |
জয়পুরের মহারাজার সঙ্গে ব্যাহার
পর অয় মহারানী গায়ত্রী দেবী বলিয়ায় সাধারনত পরিচিত | অয় অতি সুন্দরী
হবার সঙ্গে সঙ্গে একজন খুব ভাল ঘোড়সওয়ারও ছিল আর একজন সুদক্ষা পোলো প্লেয়ার ছিল | খালি এইলায়
নাহয়, গায়ত্রী দেবী একজন ভাল শিকারীও ছিল | অর শিকার করা বাঘের সঙ্গে ফটোখান
কি কা’হ দেখিছেন নাকি ? ওই ফটোখান
দেখিলে গায়ত্রী দেবী যে কত ভাল শিকারী ছিল সেইটা বেশ ভাল রকম বুঝা যায় | অর রহন-শহনের স্টাইল দেখিলে বুঝা যায় যে অয় কত
ব্যক্তিত্বপূর্ণ রাজবংশী মহিলা ছিল | একজন রাজমাতা কেমন হয়,
এর প্রমান গায়ত্রী দেবী সারা পৃথিবীক দিয়া গেইছে | ধন্য তুই রাজমাতা !
অয় গাড়ি-ঘোড়ার খুব সৌখিন ছিল | হামার দেশত প্রথম W126 একখান SEL 500 মোটর গাড়ি আমদানি করে হামার প্রিয়
গায়ত্রী দেবী | ওই গাড়ি খানক পরে মালয়শিয়া দেশত জল জাহাজত
রপ্তানি করিয়া দেয় |
দেশ-বিদেশত খুব নাম হয় গায়ত্রী দেবীর |
গায়ত্রী দেবীর দাদা-দাদী ছিল
মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ন ভূপ বাহাদুর আর সুনীতি দেবী | ব্রাহ্ম সমাজের প্রবর্তক কেশব চন্দ্র সেনের সুপুত্রী ছিল সুনীতি দেবী যায়
পরে রাজবংশী নারায়ন হয়া কোচবিহারের মহারানী হয় | গায়ত্রী
দেবীর দুই ভাই ছিল – জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ন আর ইন্দ্রজিতেন্দ্র নারায়ন | ১৯২২ সন’ত পিতার মৃত্যুর পর শিশু কালতে
জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ন কোচ বিহারের রাজ সিংহাসন’ত বসে |
রাজমাতা গায়ত্রী দেবীর একজনেই
বেটা ছিল –
জয়পুরের রাজকুমার জগত সিং, যার জন্ম হইচিল
১৯৪৯ সনের ১৫ই অক্টোবর | রাজকুমার জগত সিং, অর জ্যাঠোর (বাপের বড় ভাই) দেওয়া রাজন্য গিরী হিসাবে ইসার্দা রাইজ্যের
রাজার সিংহাসনত বসে | এই সম্পর্কত, জগত
সিং ছিল জয়পুরের বিখ্যাত ভবানী সিংএর
জ্যাঠতুত ভাই | জগত সিং ১৯৭৮ সনের ১০ই মে থাইল্যান্ড-এর
রাজকুমার পিয়ারংসিত রংসিত আর রাজকুমারী বিভাবতী রংসিতের বেটি মম রাজবংসে
পিয়ানন্দনা রংসিতের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনত জড়িত হয় | অমার দুইজন
সন্তান হয় ১৯৭৯ সন’ত রাজকুমারী লতিত্য কুমারী আর ১৯৮১ সন’ত দেবরাজ সিং(ইসার্দার রাজা) |
১৯৪৭ সনত, ভারতের স্বাধীনতা লাভের
পর, জ্যালা রাজতন্ত্র বা রাজার রাজত্ত্ব শেষ হয়া যায়,
স্যালা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বদলিয়া যায় | ওই বদলিয়া যাওয়া পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খায়া চলিবার জইন্যে গায়ত্রী দেবীও
রাজনীতিত নামিয়া পরিচিল | সী.গোপালচারী, দ্বিতীয় গভর্নর জেনারেল অফ ইন্ডিয়া ‘স্বতন্ত্র’
পার্টি নামে এক নয়া রাজনৈতিক দল গঠন করে | ওই পার্টির হয়া,
১৯৬২ সনত গায়ত্রী দেবী লোকসভার ভোটত দাঁড় হয় আর প্রচুর ভোট পায়া
সাংসদও হইচিল | মোট ২,৪৬,৫১৬ ভোটের মইধ্যে গায়ত্রী দেবী পাইচিল ১,৯২,৯০৯ ভোট | এত ভোটে ইলেকশন জিতা পৃথিবীর মইধ্যে
রেকর্ড হয়া থাকিচে – গিন্নিস বুক অফ রেকর্ডস এইটা স্বীকৃতি পাইচে | তারপর, ১৯৬৭ আর ১৯৭১ সন’ত লোকসভার ভোটত জিতেচিল | যেহেতু, ক্ষমতাশীল দল
কংগ্রেস পার্টির সঙ্গে অমার মতের মিল হয় নি, এই জইন্যে
গায়ত্রী দেবীর সঙ্গে কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে সব সময় মতবিরোধ হইতে থাকে |
এমন কি, ১৯৭১ সন’ত জ্যালা কেন্দ্রীয় সরকার ‘প্রিভি পার্স’ ধ্বংস করিয়া দেওয়া হয় আর রাজ পরিবারের
সব সুবিধা বন্ধ করিয়া দেওয়া হয়, স্যালা গায়ত্রী দেবীক
ট্যাক্স আইন অমান্য করার অভিযোগত আটক করিয়া দিলীর তিহার জেলত ৫ মাসের জইন্যে
কারাবাস যাপন করিবা লাগিচিল |
১৯৭৬ সন’ত একজন লেখক সান্তা রাম
রাউ-এরসঙ্গে মিলিত ভাবে নিজের জীবনী
প্রকাশিত করে যার ইংরেজীত নাম দেয় ‘এ প্রিন্সেস
রিমেম্বার্স’ | গায়ত্রী দেবীর জীবনীর
উপর ভিত্তি করিয়া একটা সিনেমাও তৈরী হইছিল যার নাম ছিল ‘মেময়ার্স অফ এ হিন্দু প্রিন্সেস’ আর যাকে পরিচালনা করিচিল ফ্রানকয়িস লেভী |
গায়ত্রী দেবীর সুন্দরতার তুলনা খুব কম হয়
| অর সমসাময়িক যুগত, আধুনিক ফ্যাশনের
প্রতীক হিসাবে হামার পুরা দেশটাত অর নাম জুড়িয়া গেইছিল | ইংরাজি ‘ভোগ’ ম্যাগাজিন দ্বারা লীলা নাইডুর সঙ্গে গায়ত্রী
দেবীক-ও ‘পৃথিবীর দশজন সব চাইতে সুন্দরী মহিলার মইধ্যে একজন’
হিসাবে মান্যতা দিয়া গেইছিল |
সমাজ সেবার দিকেও গায়ত্রী দেবীর বিশেষ ঝোঁক ছিল | জয়পুরত
মায়া ছুয়ালার জইন্য স্কুল খুলিচিল অর নামে
‘মহারানী গায়ত্রী দেবী গার্লস পাবলিক স্কুল’ ১৯৪৩ সন’ত স্থাপিত করাইচিল | ১৯৯৯
সন’ত শুনা গেইছিল যে গায়ত্রী দেবীক নাকি কোচবিহার লোকসভা
ক্ষেত্র থাকিয়া তৃনামূল কংগ্রেসের হয়া ভোটত দাঁড়াবার জইন্যে আমন্ত্রণ দেওয়া হয়ছিল
কিন্তু, ওয় সেইটা স্বীকার করে নাই |
৯০ বছর বয়সত ২০০৯ সনের ২৯শে
জুলাই গায়ত্রী দেবীর জয়পুরত মৃত্যুলোক প্রাপ্তি হয় | কোচবিহার বাসীর
জইন্যে গায়ত্রী দেবীর মন সবসময় কান্দে | ওয় চাহিচিল যাতে
রাইজ্যের ভূতপূর্ব প্রজা যাতে সুখ-শান্তিতে থাকে | কিন্তু,
রাজার রাজত্ব দেশ থাকিয়া উন্মূলন করিয়া দিবার পর, রাজনৈতিক তুল-কালামের মইধ্যে আর গায়ত্রী দেবীর স্বাকার হবা পারে নাই |
অয় রাজনীতি’ত ঢুকিয়া চেষ্টা করিচিল দেশ আর
সমাজের প্রতি আর’হ কিছু করার – সেই
বাকি কাজগিলা এলা হামাক করিবা লাগিবে |
-কাপ্টেন নলিনী রঞ্জন রায় (আর্মি অবসরপ্রাপ্ত)
Capt. Nalini Ranjan Ray (Ex-Army)
Comments
Post a Comment