রাজবংশী জাতির মাগদর্শক - ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা (Rajbanshi Jatir Magdarshak - Thakur Panchanan Barma )
Written in Rajbanshi / Kamatapuri Language (This article is taken from my recently published book 'পোহাতিয়া তারা' Pohatiya Tara)
রাজবংশী ক্ষত্রিয় জাতির গৌরব, সম্প্রদায়ের মান-সম্মানের রক্ষাকর্তা, দেশের সুপুত্র - সেই মহান মনীষীর জন্ম হয় স্যালাকার কোচবিহার রাইজ্যের অধীনত মাথাভাঙ্গা সাব-ডিভিসন, খলিসা মারি গ্রামত ইংরাজী ১৮৬৬ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারী (১লা ফাল্গুন ১২৭২ বঙ্গাব্দ, মঙ্গলবার) | অর বাপের নাম ছিল খোসাল চন্দ্র সরকার, খলিসা মারির এক জোতদার; আর আয়ীর নাম ছিল চম্পলা দেবী | বাইল্য কালে অর নাম দ্যাওয়া হইচিল পঞ্চানন সরকার | পঞ্চানন যাতে লেখাপড়া শিখিয়া মানুষ হবা পারে , তার জৈন্ন অর পিতা খোসাল চন্দ্র সরকার তার বেটা পঞ্চাননের পড়াশুনার প্রতি খুবে আগ্রহী ছিল |
শিশুকালে অর পড়াশুনা শুরু হয় গ্রামের
পাঠশালাত (প্রাইমারী স্কুল) | প্রাইমারী স্কুল পাস করিবার পর, অর পিতা খোসাল চন্দ্র সরকার পন্চাননক ভর্তি করিয়া দ্যায়
মাথাভাঙ্গা মিডল ইংলিশ স্কুলত, যেইটা
খলিসামারি থাকিয়া প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরত ছিল | ইং ১৮৮৫ সালত পঞ্চানন মিডল (এম. ই. পরীক্ষা) পাস করে | অর এম.ই. পাস করার ব্যাপারে ইং ১৮৮৫-৮৬ সালত
প্রকাশিত কোচবিহার গ্যাজেটিয়ারত স্যালাকার শিক্ষা বিভাগের সুপারিন্টেন্ডেন্ট কালীদাস বাগচী বাবু ইংরাজীত লেখিছিল, “Panchanan
Sircar, a native of Cooch Behar who passed the M.E. Examination in the first
division from Mathabhanga School succeeded to secure the first place in the
general list of the Rajshahi Division”.
সেই সময়, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দিনাজপুর, বগুড়া,
পাবনা আর মালদহ অঞ্চলগিলা রাজশাহী ডিভিসনের ভিতর পরে | মিডল পাস করার পর জেংকিংস স্কুলত
ভর্তি হয় পঞ্চানন | যেহেতু এম.ই. পরীক্ষাত প্রথম হইচিল, সেই জইন্য অকে জেংকিংস স্কুলত অকে কুন’হ ফিস
দিবা নি লাগিচিল আর ব্রিটিশ সরকার থাকিয়া প্রতি মাসে চার টাকা হিসাবে মেডাল
স্কলারশিপ পাইচিল | ইং ১৮৮৯ সালত প্রবেশিকা পরীক্ষাত উত্তীর্ণ হয়্যা ইং ১৮৯১-৯২
সালত (১২৯৮ বঙ্গাব্দ) ফাইন আর্টসত ইন্টার মিডিয়েট
(এফ. এ.) পাস করে পঞ্চানন |
ইং ১৮৯৪-৯৫ সালত (১৩০২ বঙ্গাব্দ) কোচ বিহারের ভিক্টোরিয়া
কলেজ(স্থাপিত ইং ১৮৮৮ সাল / ১২৯৫ বঙ্গাব্দ) থাকিয়া বি. এ. (সংস্কৃত অনার্স)
পরীক্ষা পাস করে | ইং ১৮৯৭ সালত (১৩০৪ বঙ্গাব্দ) কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থাকিয়া এম.
এ. পাস করে আর ওই বিশ্ববিদ্যালয় থাকিয়ায় ইং ১৮৯৯ সালত আইনের ডিগ্রী এল.এল.বি.
পরীক্ষাত উত্তীর্ণ হয় | এম.এ. আর এল.এল.বি. পাস করার পর পঞ্চানন, অধুনা বাংলাদেশের
রংপুর কোর্টত আইন প্র্যাকটিস শুরু করে |
সেই সময়, এক ঘটনা ঘটে যার ফলে অর জীবনত পরিবর্তন আসে |
ঘটনাটা হইচিল এই যে, একজন উঁচা জাতির উকিল
পঞ্চাননের পিন্ধা উকিলের গাউন পিন্ধিতে মানা করিয়া দ্যায় | এক বড় জাতির হয়্যাও ক্যানে লোকে রাজবংশী
ক্ষত্রিয় লোকক ছোট জাতির লোক ভাবে ? যার এত গৌরবশালী প্রাচীন ইতিহাস আছে,
প্রাগ-জ্যোতিষপুর-কামরুপ-কামতার লোক যার পূর্বপুরুষ ছিল ঐতিঝ্যশালী কুমার ভাস্কর
বর্মা, পৃথু, বল্লভনারায়ন, নরনারায়ন, চিলা রায়
আর’হ অনেকে, তাকে কেমন করে ছোট জাতির লোক কহে ?
নিজের জায়গার রাজবংশী সম্প্রদায়ের লোকগিলার উন্নতির কাথা
পঞ্চাননের মনত সব সময় ছিল | এই জইন্যয় রাজবংশীর প্রথম এম.এ., এল.এল.বি. হওয়া
সত্যেও অয় কোচবিহার ফিরিয়া আসে আর চাকরীর চেষ্টা করে | প্রথমে কোচবিহার রাইজ্যের
চাকুরী চেষ্টা করে আর সেইঠে চাকুরী না পাওয়াতে অয় কোচবিহার কলেজ এন্ড স্কুলত হোস্টেল
সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিসাবে চাকরী গ্রহন করে
| তারপর, ইং ১৯০১ সালত কোচবিহার জেংকিংস
স্কুলের হোস্টেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিসাবে অকে নিযুক্ত করা হয় |
কোচবিহার রাইজ্যের লগত চাকুরীর দরখাস্ত খান গ্রহণ না
হওয়াতে আর ঘুরিয়া আসিবার কারণেই পঞ্চাননের মনত আঘাত পাইচিল আর নিশ্চয় করিচিল যে
রাজবংশী জাতির উত্থান করা বিশেষ দরকার | অন্যদিকত, সেই রংপুরত ঘটিত ব্যাপারটা
জেইঠে তার এত অপমান হয়, সেই অপমান অর মনত ছিল | সেই লইজ্জাজনক ঘটনার পর উকিল
পঞ্চানন সরকার এই দৃড় নিশ্চয় করিচিল যে, নিজের আত্মসম্মান আর জাতিটার স্বাভিমান
ফিরায় অনিবা লাগে | প্রথমে নিজেকে বদলিবা লাগিবে | নিজেকে করিয়া তুলিল নির্ভয় – নির্ভিক | ঠাকুর
পঞ্চানন বর্মা নিজেকে সমাজ উদ্ধার সেবা আর রাজনৈতিক ক্ষেত্রত সপিয়া দিলে | শত শত
বছরে লজ্জায় লুকাইয়া থাকিবার পর, রাজবংশী জাতিক পুনরায় নিজের হারানো ক্ষত্রিয়
পরিচয় ফিয়ায়া আনাইয়া দিবা লাগিবে – এই কাজত নিজেকে সঁপিয়া দিলে |
ক্যানে নিজের উপাধি বদলালে পঞ্চানন – এইটা বিশেষ আলোচনা
করা দরকার | রাজবংশী ক্ষত্রিয়র সমান পশ্চিম ভারতের ঐতিঝ্যশালী আর বীর-জাতি
রাজপুত-ক্ষত্রিয় নিজের আত্ম-সম্মান বজায় রাখিবার তানে নিজেকে ঠাকুর কয়হা গর্ব বোধ
করে আর নামের আগে ঠাকুর ল্যাখে | আর প্রাচীন যুগে শক্তিশালী রাজবংশী ক্ষত্রিয়
রাজার উপাধি ছিল বর্মা – জেনোং কুমার ভাস্কর বর্মা | যার পূর্বপুরুষ এত পরাক্রম
শালী বীর যোদ্ধা ছিল আর ক্ষত্রিয় হিসাবে পশ্চিম আর মধ্য ভারতের রাজপুত ক্ষত্রিয়
জাতির সমকক্ষ তার নামের আগত ঠাকুর আর নামের উপাধি বর্মা হওয়া যুক্তিযুক্ত |
ক্ষত্রীয় জাতির উন্নতির প্রতি পঞ্চাননের অটল কার্যশীলতা দেখিয়া, নিমন্ত্রণ পায়া
রাজস্থানের জয়্পুরত আয়োজিত ভারতীয় ক্ষত্রিয় মহাসভাত অংশ গ্রহণ করে পঞ্চানন |
উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজপুত ক্ষত্রিয় লোকে নিজের নামের সঙ্গে ঠাকুর যুক্ত করে |
নিজে ক্ষত্রিয় বলিয়া নিজের নামটার উপাধি বদলায় দিলে পঞ্চানন | স্যালা থাকিয়া
পঞ্চানন সরকারের নাম হয়া গেল ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা | রাজপুত ক্ষত্রিয় লোকের মত
ঠাকুর পঞ্চানন মাথাত ‘পাগড়ি’ পিন্ধিবা শুরু করিয়া দ্যায় | পরে ইংরেজ সরকার
রায়সাহেব উপাধি প্রদান করিলে পঞ্চাননের পুরা নাম রায়সাহেব ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা
হিসাবে বিখ্যাত হয় |
ক্ষত্রিয়
আন্দোলন আর রাজবংশী সমাজ সুধারণ : ক্ষত্রিয় আন্দোলনের উত্পত্তি হয় কিভাবে হয় এইটা
জানা বিশেষ দরকার | আদিকাল হইতে পরিচিত আর বিগত পাঁচ শত বছর ধরিয়া দক্ষিন বঙ্গীয়,
মৈথিলী আর কানৌজী ব্রাহ্মণ দ্বারা স্বীকৃত ক্ষত্রিয় পরিচয় প্রাপ্ত যেই রাজবংশীক
সঘায় মান-সম্মান করে, সেই রাজবংশীক একজন তথাকথিত একজন উঁচা জাতির সমাজের লোকের
দ্বারা অপমানিত হবারই অন্যতম কারণ ছিল ক্ষত্রিয় আন্দোলনের শুরুবাত |
যে কারণেই হোক, ইং
১৮৭২ সালের আদম সুমারির জন গণনাত তত্কালীন
উত্তর বঙ্গের রাজবংশী লোকগুলাক কোচ বলিয়া গণ্য করা হইচিল | ইং ১৮৯১ সালের জন গণনায়, সরকারের তরফ থাকিয়া
নির্দেশ বাহির করা হইচিল যে রাজবংশী ক্ষত্রিয়লাক আবার কোচ সম্প্রদায়ের ভিতর গণ্য
করা হোক এই বলিয়া | আর রংপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এফ.আই.স্কাইন সাহেব স্থানীয়
সুপারিন্টেন্ডেন্টক নির্দেশ দ্যায় যে রাজবংশী সম্প্রদায়ের লোকগুলাক কোচ সম্প্রদায়
হিসাবে গণ্য করা হোক |
শ্যামপুর (রংপুর) জমিদার বাড়ির খাজাঞ্চি হরমোহন রায়, যায়
নিজে রাজবংশী ক্ষাত্রিয় ছিল, বৃটিশ সরকারের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু
করে দ্যায় | এই ছাড়াও, রংপুরের রাজবংশী
ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের বিকাশের তানে অহে এই এক সংগঠন স্থাপিত করে যার নাম দিছিল
‘রংপুর ব্রাত্য ক্ষত্রিয় বিধায়্নী সভা’ | ইং ১৮৯১ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারী মাসত রংপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটক দ্যাওয়া এক
স্মারকলিপিত আর্জি করা হইচিল যে রাজবংশী সম্প্রদায়ক কোচ সম্প্রদায় থাকিয়া এক আলাদা
সম্প্রদায় হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক আর আদম সুমারিত আলাদা ভাবে অন্তর্ভুক্ত করা
হোক | কোচ আর রাজবংশীর মিঝত তত্কালীন বৃটিশ
সরকার দ্বারা অযৌতিক ভাবে একত্রিত করিবার প্রচেষ্টা আর এর সুযোগ নিয়া কিছু উঁচু জাতির
চক্রান্তের শিকার হওয়া হইতে বাঁচার উপায় বাহির করা ছিল ক্ষত্রিয় আন্দোলনের আর একটা
কারণ |
স্যালা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব ধর্মীয় গুনী-মানি লোকের
অভিমত নেওয়ার তানে ‘রংপুর ধর্ম সভা’-ক যোগাযোগ করে | এই ধর্মসভা হিন্দু জাতির
মুখ্যপাত্র হিসাবে মানিত হয় আর পন্ডিতগণ এর সদস্য ছিল | মহামহোপাধ্যায় পন্ডিত
যাদবেস্বর তর্করত্ন নামে এক পন্ডিতক রাজবংশী নেতাগণ মনোনিত করে সভাত আলোচনা করিবার
তানে আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জইন্য | প্রসন্ন নাথ চৌধুরী সাহেবের সভাপতিত্বত রংপুর
শহরত ইং ১৫ ই মার্চ ১৮৯১ তারিখে মহাসভা এক
সভার আয়োজন করে যাতে পন্ডিত, শাস্ত্রকার, ন্যায়াবিক আর নবদ্বীপের পন্ডিত
জ্ঞানী-গুনি ব্যক্তি গন মিলিয়া ৪০০ জনের বেশী সদস্য আসিয়া সভাত ভাগ ন্যায় |
অনেকক্ষণ ধরিয়া বিস্তারিত আলোচনা করার পর এইটা পরিস্কার হয় যে বহুদিন বৈদিক
আচার-ব্যবহার থাকিয়া বঞ্চিত থাকার ফলে রাজবংশী জাতি পতিত হয়্যা যায় আর এই
সিদ্ধান্ত ন্যাওয়া হয় যে উত্তরবঙ্গের রাজবংশী হইল হিন্দু আর ব্রাত্য ক্ষত্রিয়
|
ধর্ম মহাসভার সিদ্ধান্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইং ১৮ই মার্চ
১৮৯১ তারিখত জানানো হয় | জেলা
ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব ধর্ম সভার সিদ্ধান্ত স্বীকার করিয়া ইং ৩রা এপ্রিল ১৯৮১
তারিখে আদম সুমারির সুপারিন্টেন্ডেন্ট
সাহেবক লিখিত সরকারী পত্র দ্বারা জোর দিয়া সংস্তুতি করিল যে রাজবংশী মানুষক
ব্রাত্য ক্ষত্রিয় হিসাবে আদম সুমারিত অন্তর্ভুক্ত করা হোক | ইং ১৮ই মে ১৮৯১ সাল (
১লা জৈষ্ঠ ১২৯৮ বঙ্গাব্দ) তারিখে এক পরিপত্র জারি করিয়া স্কাইন সাহেব এই নির্দেশ
জারি করিল যে সরকারী সব রকম কাজ-কর্ম্মে রাজবংশী নিজেকে ব্রাত্য ক্ষত্রিয় হিসাবে
লেখিবে আর পরিচয় দিবে |
কিন্তু, দুখের
বিষয়, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের জোরদার
পেশকাশ করা সত্যেও আদম সুমারিত অর সংস্তুতি মানা হয় নি আর ব্রিটিশ সরকারের ‘ডিভাইড
এন্ড রুল’ জারি থাকিল | এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা ইং ১৯০১ সালত
ক্ষাত্র আন্দোলন শুরু করে | সেই আন্দোলন ছিল বেদ মাতা গায়ত্রী মন্ত্রাশ্রয়ী দৈবিক
অনুপ্রেনিত যাতে হিন্দু রাজবংশী সম্প্রদায়টাকে লেগাবা চাহিচিল আন্ধার থাকিয়া আলোর
দিকত, হিংসা-বিদ্বেষ থাকিয়া প্রেম-ভাইচারার দিকত আর দুর্বলতা থাকিয়া বলশালী হবার
দিকত | অসত্যের উপর সত্যের জয় হোক - এই
ছিল মূল মন্ত্র ক্ষাত্র ধর্মের |
নিজের জাতির লোকক নিজের ন্যায্য পাওনা উঁচা জাতির স্থান
দিবার বাদে ‘ক্ষত্রিয় সমিতি’র গঠন করিল ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা | ইং ১৯১০ সালের ১লা
মে, বঙ্গাব্দ ১৩১৭ সালের ১৮ই বৈশাখের পুন্নতিথীত অধুনা বাংলাদেশের রংপুর শহরের নাট
মন্দিরত ক্ষত্রিয় সমিতির স্থাপনা হয় |
রাজবংশীর ঐতিঝ্যশালী ইতিহাস আর ব্রাহ্মন সমাজের নীতিগত অনুমোদন নিয়া
ক্ষত্রিয়করণ আন্দোলনের ডাক দিছিল পঞ্চানন তত্কালীন অবিভাজিত উত্তরবঙ্গের
গ্রামাঞ্চলত | ইং ১৯১১ সালের পর থাকিয়া উত্তরবঙ্গের রাজবংশীগিলা ব্রাত্য না কয়হা
সিধাসিধী ক্ষত্রিয় হিসাবে চিন্হিত করিবা ধরিল | ঠাকুর পঞ্চানন চাহিচিল যে রাজবংশীর
জন্মগত আর ভাষাগত পরিচয় রাজবংশী হিসাবে, কিন্তু কর্মগত পরিচয় হোক ক্ষত্রিয় হিসাবে
কারণ এইটায় ছিল আসল পরিচয় | এই জন্যই ত’ ঠাকুর পঞ্চানন কহে – “রাজবংশী পরিচয় ত্যাগ করিলে হামেরা হারেয়া যা’ম” |
রাজবংশী জাতির গৌরবশালী ইতিহাস সম্পর্কে পঞ্চানন অবিহিত
ছিল | রাজবংশী জাতির পূর্ব পুরুষ বেশ কয়েকশত বছর আগত হিন্দু ধর্ম পরিগ্রহণ করিয়া
ক্ষত্রিয় জাতি হিসাবে অবিহিত হইচিল | এই কারণে পঞ্চানন ক্ষাত্র ধর্ম পালন করিবার
উদ্দেশ্যত জাতিটাক পুনরায় জাগায়া তুলিবার বাদে অগ্রণী হয় | ২৭শে মাঘ, ১৩১৯ সালত ইং
১৯১২ জলপাইগুড়ি জেলার দেবীগঞ্জত করতোয়া নদীর ধারত পৈতা গ্রহন করিবার এক বিরাট
আয়োজন করে | ঐতিহাসিক করতোয়া নদীর পারত
গণসমাবেশ করিয়া মাথা মুন্ডন করিয়া পৈতা পিন্ধিয়া পূজা-পার্বন করায় সগাকে পুনরায়
ক্ষত্রিয় পরিচয় প্রদান করিল |
যেহেতু
রাজবংশীর জাতিগত প্রধান কাজ হইল রাজনীতি তাই, ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা রাজনৈতিক
ক্ষেত্রতেও নামিয়া পরিল | ইং ১৯২১ সালত ব্রিটিশ ভারতের সাধারণ ইলেক্সনত বিজয়
প্রাপ্ত করিয়া ‘বেংগল লেজিস্লেটিব এসেব্লি’ত সদস্যতা লাভ করিচিল | ইংরেজ শাসনের প্রতি আনুগত্য, প্রথম বিশ্বযুদ্ধত
ভাগ নিবার তানে রাজবংশী যুব সমাজটাক প্রেরিত করা, দেশবাসীর জৈন্ন ভাল কাজ আর
রাজনীতিবিদ হিসাবে পারদর্শিতার কারণে ঠাকুর পঞ্চাননক ব্রিটিশ সরকার দ্বারা
এম.বি.ই.(মেম্বার অফ ব্রিটিশ এম্পায়ার) আর রায়সাহেব উপাধি দ্বারার সম্মানিত করে
|
ঠাকুর পঞ্চানন ঠিক জানিচিল যে নীচু জাতি বলিয়া সেই সময়কার
উঁচু জাতির লোকে রাজবংশীক ছোট মানে; এইজইন্য দরকার ছিল জাতিটার হারায়া যাওয়া
ক্ষাত্র ধর্ম ফিরায়া আনা | ক্ষত্রিয় সমিতির মাধ্যমত অয় দুই উদ্দেশ্য সাধন করিবা
চাহিচিল – একটা ছিল রাজবংশী জাতি যে নীচু
জাতি নাহয় সেইটা প্রমাণিত করার তানে অমার ন্যায্য সামাজিক স্থান ক্ষত্রিয় বলিয়া
পরিচিন দ্যাওয়া আর, দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল রাজবংশী জাতির লোকগিলাক উঁচা জাতি হিসাবে
দেশের রাজনেতাগণের সম পর্যায়ত আনিয়া দ্যাওয়া |
যাতে জাতিটার সর্বাঙ্গীন উন্নতি হয়, তার তানে ঠাকুর
পঞ্চানন চাহিচিল যে এই জাতির সগাকে সরকারের তরফ থাকিয়া বিশেষ সুযোগ-সুবিধা যাতে
দ্যাওয়া হয় | তবে, রাজবংশী জাতিক ‘ডিপ্রেসড ক্লাস’ মানে পিড়ীত শ্রেণী বলিয়া
নামকরণের যায়গাত, ‘ব্যাকয়ার্ড ক্লাস’ মানে
পিছায় পরা শ্রেণী হিসাবে নামকরণ করিলে ভাল হয় বলিয়া ঠাকুর পঞ্চানন আগ্রহ ব্যক্ত
করে | অমার মতে, পিড়ীত শ্রেণী বলিতে নীচু জাতি বলিয়া মনে হইচিল |
উঁচা জাতি ক্ষত্রিয় বলিয়া রাজবংশী সম্প্রদায়ক পীড়িত শ্রেণী বলিলে অপমানিত করা হবে বলে স্বীকার
করিতে মানা করে বাংলার প্রাদেশিক হিন্দু সভা | কিন্তু, নিজের স্বার্থের বাদে দল
ভারী হবে বলিয়া, ইং ১৯৩২ সালত প্রতিষ্ঠিত
‘বেঙ্গল ডিপ্রেস ক্লাস এসোসিয়েসন’ রাজবংশীগনক পিড়ীত শ্রেনীর লোক বলিয়া নামাঙ্কিত
করিল | ঠাকুর পঞ্চানন বিচার বিবেচনা করিয়া
এই ঠিক করিল যে পিরীত শ্রেণী বলিয়া গণ্য হওয়া ভাল | কিন্তু, লর্ড লথাম দ্বারা যেই
লিস্ট তৈরী করা হইচিল সেইটাতে রাজবংশীর নাম ছিল নি | ক্ষত্রিয় সমিতি আবার আন্দোলন
করে | ইং ১৯৩৩ সালের সরকারী হুকুমনামা
অনুযায়ী পিড়ীত শ্রেণী নামটা বদলায় দিয়া তপসীলী জাতি নাম দেওয়া হয় | সেই তপশিলী
জাতির সূচীত রাজবংশী নামটা অন্তর্ভুক্ত করা হইচিল | তপশিলী জাতি হিসাবে যদিও কিছু
সুযোগ-সুবিধা রাজবংশীগন পাইচে, কিন্তু সামাজিক ক্ষেত্রে জাতির স্থান নিচু রয়্হা
গেইছে – এই বলিয়া অনেকে আলোচনা করে | এই তানে, ঠাকুর পঞ্চাননের মহান কাজটা এলাও
বাকি আছে বলিয়া অনেকে মনে করে |
সেই যুগত রাজনৈতিক চক্রান্ত এত চরম পর্যায় পহুচিল যে নিজের
জাতির অস্তিত্ব বজায় রাখিবার তানে ক্ষাত্র ধর্ম পালন ছাড়া রাজবংশীগনের আর উপায় ছিল
নি | নিজের চিন্তা নিজে করার দিন আসি গেইচিল | এইজন্যে ঠাকুর পঞ্চানন কহে, “তোর
আশা সঘায় করুক, তুই যেন কারও আশা না করিস” | ক্ষাত্র ধর্মের মানেও ঠাকুর
ভাল করে বুঝায় দিইচিল | মানুষের ভিতর কুন’হ বিভেদ নাই | কি হিন্দু কি মুসলমান- সগায়
এক; তাই কহিচিল, “হিন্দু-মুসলমান বিচার নাই রে, মানুষ জন নাহয় ভিন | উলসি
ধায়া আর্তের উদ্ধার – এই ত’ ক্ষত্রিয়ের চিন” |
রায়সাহেব ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার
মহাপ্রয়ান লাভ হয় ইং ১৯৩৫ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর কোলকাতাত | নিঃসন্দেহত, এই মনীষী
অবিভাজিত উত্তরবঙ্গ, আসাম আর নিকটবর্তী অঞ্চলের খালি রাজবংশী নাহয়, সৌগলায় জাতির
লগত প্রিয় হয়্যা থাকিবে | এই মহাপুরুষের যেই চিন্তাধারা আর রাজবংশী সম্প্রদায়ের
সর্বাঙ্গীন উন্নতির জইন্ন যেই প্রয়াস
করিয়া গেইছে, সেইলা সগায় চিরদিন মনত রাখিবে | অয় ছিল যুগপুরুষ আর নিজের
যুগের সময় মানবসেবা ভাল ভাবে করিয়া গেইছে | তবে,
জেইলা কাম আজিও বাকি রয়্হা গেইছে,
সেইগিলা পুরা করিবার কাজ আজিকার রাজবংশী
ক্ষত্রিয় মানছিলার হাতত আছে |
জয়তু ঠাকুর
পঞ্চানন !
Best Web Development Services in Jaipur
ReplyDeleteBest Online English Speaking Course in India
ReplyDelete